Chartered Accountancy (CA) পেশা থেকে ইনকাম — হালাল না হারাম?
অনেকেই বলেন — “CA পেশা থেকে আয় হারাম”, আবার অনেকে বলেন — “এটা হালাল।” আসল সত্য হলো, CA পেশা নিজে হারাম নয়, বরং নির্ভর করে কাজের ধরন ও উদ্দেশ্যের উপর।
ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী কোন কাজ বৈধ আর কোন কাজ অবৈধ—এই দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা বিশ্লেষণ করলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়।

Chartered Accountancy একটি পেশাদার সেবা। এর মূল কাজগুলো হলো:
1. হিসাবরক্ষণ (Accounting) → লেনদেনের সঠিক রেকর্ড রাখা
2. অডিট ও অ্যাসিউরেন্স (Audit & Assurance) → সত্যতা যাচাই করে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার রিপোর্ট দেওয়া
3. ট্যাক্স কনসালটেন্সি (Tax Consultancy) → আইনের আওতায় কর নির্ধারণ করা
4. ফাইন্যান্সিয়াল এডভাইজরি (Financial Advisory) → বিনিয়োগ ও আর্থিক পরিকল্পনায় পরামর্শ দেওয়া
5. কমপ্লায়েন্স (Compliance & Law Advisory) → ব্যবসা যেন দেশের আইন মেনে চলে তা নিশ্চিত করা


১. সুদভিত্তিক কাজ (Interest / Riba)
যদি কোনো CA ইচ্ছাকৃতভাবে সুদের ব্যবসা সমর্থন করে বা সুদভিত্তিক হিসাব তৈরি করে, তাহলে তার আয় হারাম হবে।
কুরআন:
> “তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদে যা বাকি আছে তা ছেড়ে দাও, যদি তোমরা ঈমানদার হও। যদি তা না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা গ্রহণ কর।” (সূরা বাকারা ২:২৭৮-২৭৯)
২. প্রতারণা ও মিথ্যা রিপোর্ট (Fraud / False Audit)
যদি কোনো CA আর্থিক স্টেটমেন্টে মিথ্যা দেখায়, অডিট রিপোর্টে সত্য গোপন করে বা কর ফাঁকি দেওয়ার সহায়তা করে, তবে সেটা হারাম।
হাদিস:
> রাসূল ﷺ বলেছেন: “যে আমাদের সাথে প্রতারণা করে, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস ১০১)
কুরআন:
> “অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং মানুষের সম্পদ অবৈধভাবে আত্মসাৎ করার জন্য বিচারকদের ঘুষ দিও না।” (সূরা বাকারা ২:১৮৮)
৩. হারাম ব্যবসায় সহায়তা করা
যেমন মদ, জুয়া, পর্ন ইন্ডাস্ট্রি, সুদভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বা ইসলামবিরোধী ব্যবসার জন্য হিসাব করা।
কুরআন:
> “তোমরা নেকি ও তাকওয়ার কাজে একে অপরকে সাহায্য করো; কিন্তু পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে সাহায্য করো না।” (সূরা মায়েদা ৫:২)
৪. ঘুষ ও অনৈতিক উপার্জন
কোনো প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি আড়াল করা বা ঘুষের মাধ্যমে হিসাব ঠিক দেখানোও স্পষ্ট হারাম।
কুরআন:
> “তোমরা পরস্পরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না।” (সূরা নিসা ৪:২৯)

১. সত্যবাদী ও স্বচ্ছ হিসাবরক্ষণ
কুরআন:
> “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যায় প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় থাকো এবং ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্য দাও।” (সূরা মায়েদা ৫:৮)
২. ন্যায্য অডিট ও রিপোর্টিং
আর্থিক তথ্য সঠিকভাবে উপস্থাপন করা ন্যায় প্রতিষ্ঠা ও আমানতের অন্তর্ভুক্ত।
হাদিস:
> “সত্যবাদিতা কল্যাণের দিকে নিয়ে যায়, আর কল্যাণ জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়।” (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
৩. আইনসম্মত ট্যাক্স কনসালটেন্সি
ক্লায়েন্টকে আইন অনুযায়ী ট্যাক্স দিতে সাহায্য করা ইসলামে বৈধ। কিন্তু প্রতারণা বা ফাঁকি দিলে সেটা গুনাহ।
৪. হালাল ব্যবসায় সহযোগিতা
যে প্রতিষ্ঠান বৈধ ব্যবসা করছে, তাদের আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সওয়াবের কাজ।

কুরআন:
> “হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না, তবে পারস্পরিক সম্মতিতে বৈধ ব্যবসার মাধ্যমে তা ভোগ করা বৈধ।” (সূরা নিসা ৪:২৯)
হাদিস:
> রাসূল ﷺ বলেছেন: “সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিনে নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সাথে থাকবে।” (তিরমিজি, হাদিস ১২০৯)




#30minuteeducation #muktarhossain #ca #icab
0 Comments
Please do not enter any spam link in the comment box.