ইঞ্জিনিয়ারদের বিসিএস এ সাফল্য-
মেধা বনাম সিলেবাস।
আমাদের রাষ্ট্রই বুয়েট, কুয়েট, মেডিকেল, এর ছেলেমেয়েদের কে তাদের প্রোফেশনাল সেক্টর ছেড়ে বিসিএস এ আসতে বাধ্য করছে।
নিঃসন্দেহে তারা মেধাবী এবং যোগ্য, তাহলে কেন তারা সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নেতৃত্বে না যেয়ে তাদের চেয়ে কম যোগ্যতা সম্পন্ন লোকদের ডোমিনেশন সহ্য করবে।
সুতরাং এই পরিস্থিতিতে তারা বিসিএসে আসবে এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু আমার প্রশ্ন অন্য জায়গায়। বিসিএস পরীক্ষার সিলেবাস এ কি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে? বিজ্ঞান,মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার ছাত্রছাত্রীদের জন্য সমান সুযোগ রেখে কি এই সিলেবাস করা হয়েছে?
উত্তর হল: না।
বিসিএস পরীক্ষার ক্যাডার নির্ধারণকারী রিটেন পরীক্ষার সিলেবাস মারাত্মকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট।
৯০০ নম্বরের এই সিলেবাস থেকে বিজ্ঞানের ছেলেমেয়েরা বিরাট সুবিধা আদায় করে নেয়।
কিভাবে?
লিখিত পরীক্ষায় যে ছয়টি বিষয় থেকে প্রশ্ন হয় তার মধ্যে ১০০ নম্বর থাকে সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং ৫০ নম্বর থাকে গাণিতিক যুক্তি থেকে।
সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ১০০ নম্বর আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে যার মধ্যে সাধারণ বিজ্ঞানে ৬০, কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তিতে ২৫ এবং ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস এ ১৫ নম্বর।
সাধারণ বিজ্ঞানের ৬০ নম্বরের মধ্যে কিছু সাধারণ প্রশ্ন থাকলেও বাকি অংশ (৫০%এর বেশী) এবং কম্পিউটার ও ইলেকট্রিক্যাল এর ৪০ নম্বর এর পুরোটা টেকনিক্যাল বিষয় থেকে আসে। সন্দেহ থাকলে ৪০ তম বিসিএস এর কম্পিউটার অংশের লিখিত প্রশ্ন দেখুন!
এবার আসি গাণিতিক যুক্তিতে।
গাণিতিক যুক্তির একটা বড় অংশ থাকে উচ্চতর গণিত থেকে।Permutations, Combinations, Probability, Cartesian Geometry, Exponents and Logarithm ইত্যাদি অংশ থেকে প্রশ্ন থাকে যার পুরো সুবিধা বিজ্ঞানের ছেলেমেয়েরা পায়।
উল্লিখিত এই ১৫০ নম্বরই মূলত ক্যাডার নির্ধারণ করে। কারন ৯০০ নম্বরের মধ্যে ২০০( উল্লিখিত ১৫০ নম্বর + মানসিক দক্ষতায় ৫০) নম্বর রয়েছে যেখানে বেশী নম্বর উঠানো যায়।
কারন এখানে সঠিক লিখলে কম নম্বর দেওয়ার সুযোগ নাই। ফলে পারলে সহজেই এখান থেকে ৯০% এর বেশী নম্বর তোলা যায়।
অপরদিকে বাকি বিষয়সমূহ - বাংলা,বাংলাদেশ বিষয়াবলি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ও ইংরেজি অংশে যত ভালই লেখা হোক না কেন ৬৫% এর বেশী নম্বর উঠানো কঠিন হয়।
তাহলে সিলেবাসের প্রথম পক্ষপাতদুষ্টতা হল এমন টেকনিক্যাল বিষয়ের অন্তর্ভুক্তি যা সরাসরি একটা পক্ষকে সুবিধা দিচ্ছে এবং দ্বিতীয় পক্ষপাতদুষ্টতা হল এমন অংশে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে যা থেকে বেশী নম্বর উঠানো সম্ভব এবং অন্যদের জন্য যা আয়ত্ব করা সময়সাপেক্ষ ও দূরূহ।
উচ্চতর গণিত, বিজ্ঞান,কম্পিউটার ও ইলেকট্রিক্যাল অংশ বিজ্ঞানের ছাত্রদের জন্য একেবারেই বেসিক বিষয় যা আয়ত্ত করাই অন্যদের জন্য সবচেয়ে সময়সাপেক্ষ ও চ্যালেঞ্জিং।
কেন চ্যালেঞ্জিং সেটা বোঝার জন্য আপনি একবার লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস দেখতে পারেন।
এত বড় সিলেবাস এত কম সময়ে শেষ করে সবকিছু মনে রাখা খুবই কঠিন কাজ তার উপর এইসব টেকনিক্যাল বিষয়গুলো নন-সায়েন্সদের উপর রীতিমতো গোদের উপর বিষফোঁড়া রূপে হাজির হয়।
আর এর পুরো সুবিধাটা যায় সায়েন্সের ছেলেমেয়েদের পকেটে।
অন্যরা যখন তাদের প্রস্তুতির বেশীরভাগ সময়ই গণিত আর বিজ্ঞান অংশ নিয়ে পড়ে থাকে তখন সায়েন্সের ছেলেমেয়েরা বাকি বিষয়গুলোতে এগিয়ে যায়,
কারণ তাদের বিজ্ঞান আর গনিত অংশ একপ্রকার পড়াই লাগে না,এগুলো তাদের কাছে বেসিক বিষয় যা তারা তাদের পূর্ববর্তী শিক্ষা জীবনে শিখেছে।
অথচ মানবিক এর ছাত্রছাত্রীরা এই সিলেবাস থেকে কিছু সুবিধা ( যেমন- বাংলাদেশ বিষয়াবলি ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি) পেলেও বিজনেস স্টাডিজ এর ছাত্রছাত্রীদের জন্য এই সিলেবাস পুরোটাই শুভংকরের ফাঁকি!
তাদের সারাজীবনের পড়ালেখার কোন সুবিধায়ই তারা এখান থেকে পায় না। এমনকি ৯০০ নম্বর এর মধ্যে ১ নম্বরের প্রশ্নও নাই যেখানে তারা অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকে!
এখন অনেকেই বলবেন যে, আপনাকে ক্যাডার হতে হলে, দেশ চালাতে হলে এইগুলো শিখতে হবে,জানতে হবে নাহলে আপনার যোগ্যতার প্রমাণ হল না।
তাদেরকে বলতে চাই আপনি বলুনতো ক্যাডার হওয়ার জন্য কি কার্শফ এর ভোল্টেজ ল' জানা বেশী জরুরি নাকি আয়-ব্যয় হিসাব,মানি মার্কেট, ক্যাপিটাল মার্কেট, ইন্টারেস্ট রেট,বাজেট ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা থাকা বেশি জরুরি,
general microprocessor এ program counter কি সেটা জানা বেশী জরুরি নাকি Cost of capital,Cost of Debt,Annual Report,Present Value,Future value জানা বেশী জরুরি?
উচ্চতর গনিতের জটিল সূত্র নাকি ফিন্যান্স, ব্যাংকিং, অর্থনীতি,হিসাববিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়?
প্রত্যেকটা মন্ত্রনালয়ে সচিবদেরকে চীফ একাউন্টটিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করতে হয়,জেলাতে ডিসি এবং উপজেলাতে ইউএনও রা প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন,
ট্যাক্স ক্যাডার,অডিট, কাস্টমস ক্যাডার এ যে দায়িত্ব পালন করতে হয় তা বিজনেস স্টাডিজ স্টুডেন্টদের পড়াশুনার সাথে সরাসরি জড়িত।
বাংলাদেশের এমন কোন ইঞ্জিনিয়ারিং ও নন-ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠান নাই যেখানে একাউন্স ও ফাইনান্স ডিভিশন নাই।
একটু চিন্তা করলেই পরিষ্কার বুঝতে পারবেন যে, বিজ্ঞান,ইলেকট্রিক্যাল,উচ্চতর গনিতের চেয়ে বরং অর্থনীতি, হিসাববিজ্ঞান, ফিন্যান্স, ব্যাংকিং,ম্যানেজমেন্ট এর মৌলিক জ্ঞান বিসিএস ক্যাডার দের জন্য অনেক বেশী প্রয়োজনীয়।
তাই সময় এসেছে এই বৈষম্যের বিরুধ্যে পদক্ষেপ নেওয়ার, সময় এসেছে বাংলাদেশের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ চাকুরির পরীক্ষার সিলেবাসের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার।
সিলাবাসে যদি বিজ্ঞান,প্রযুক্তি ও ইলেকট্রিক্যাল এর মত বিষয়গুলো থাকে তাহলে এর চেয়ে বেশী প্রাসঙ্গিক বিষয়সমূহ - অর্থনীতি, হিসাববিজ্ঞান, ফিন্যান্স, ব্যাংকিং এবং ম্যানেজমেন্ট এর মৌলিক বিষয়গুলো কেন থাকবে না?
=====-------------------====
If you like my content, feel free to share it on your favorite social network.
Author,
#muktarhossain
#30minuteeducation
#twolearning #bcs #BCS_2022 #টুলার্নিং #two #learning #2learning #voiceofmuktar
0 Comments
Please do not enter any spam link in the comment box.