কিভাবে ইউরোপীয়ান ও আমেরিকানদের পিছনে ফেলে ভারতীয়রা টেকনোলোজি-বিশ্বে CEO-এর পদগুলিতে আদিপত্য স্থাপন করে যাচ্ছে?
2020 সালের জানুয়ারি
মাসে টেকনোলজি বিশ্বে দুটি ঘোষণা আসে।
দুটি টেকনোলজির জায়ান্ট
কোম্পানি IBM- অরবিন্দ কৃষ্ণান'কে এবং wework - সন্দীপ মাতৃনা'
কে তাদের কোম্পানির CEO হিসেবে নিয়োগ দেয়।
এই ব্রেকিং নিউস-এ
ভারতীয়দের খুব একটা কৌতুহল হতে দেখা যায় নাই,
কারণ গত কয়েক বছরে
বিশ্বের সেরা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হওয়ার পথই
ভারতীয়রা অনুসরণ করেছে।
কিন্তু কেন ?
কেনো টেকনোলজি বিশ্বে
এককভাবে ভারতীয়দের জয়জয়কার ?
একটা দেশ পোশাক রপ্তানিতে
বিশ্বে সেরা হতে পারে, দক্ষ শ্রমিক রপ্তানিতে বিশ্বে সেরা হতে পারে।
কিন্তু ইন্ডিয়া এমন
এক দেশ টেকনোলজি বিশ্বে CEO রপ্তানিতে বিশ্বে সেরা হয়ে বসে আছে।
যে দেশের প্রায় অর্ধ কোটি
মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে, জীবন যাত্রার মান যেখানে খুব সামান্য।
এত সমস্যার পরেও
বিশ্বেজুড়ে ভারতে নতুন এক পরিচয় গড়ে উঠেছে। ভারতকে এখন বলা হচ্ছে Big
Bazar of CEO .
Google বলুন অথবা Facebook, Adobe, Bata, Mastercard, Nokia,
Netapp, Pepsico, কিংবা IBM -র মতো বিখ্যাত সব
কোম্পানিগুলির সর্বোচ্চ পদে সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন ভারতীয় নাগরিকেরা।
কিভাবে ইউরোপীয়ান বা
আমেরিকানদের পিছনে ফেলে মেধা ও যোগ্যতার মাপ কাঠিতে উপরে উঠে এসেছে
ভারতীয়রা।
সুন্দর পিচাইয়ের জায়গায়
গুগল কেন একজন আমেরিকানকে তাদের প্রধিনিত্ব সামলানোর দায়িত্ত্ব দিলো না?
কেন বিল গেট্স
মাইক্রোসফটের ভার তার স্বদেশী কারো হাতে না দিয়ে সত্য নাদেলাকে CEO বানালো ?
অরবিন্দ কৃষ্ণা (CEO: IBM ), জয়শ্রী উল্লাল (CEO: Artista)
, অঞ্জলী সুদ (CEO: VIMO), সন্দ্বীপ কাটারিয়া (CEO:
BATA),
পরাগ আগারওয়াল (CEO: Twitter) এই নামগুলির জায়গায়-ত অন্য কারু দেশের নাম
থাকতেই পারতো। কিন্তু কেন ভারতীয় ? এই মানুষগুলোই নানা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির
শীর্ষ পদে আরোহণ করেছে।
তীক্ষ্ণ মেধা?
সে তো অনেকের মধ্যই আছে।
কঠোর পরিশ্রমও হাজার হাজার মানুষ করেন। তবে ভারতীয়রা অন্য কোন জায়গায় বেশি? কেন
চীনের মতো দেশ থাকতে মেধা রপ্তানিতে শীর্ষে উঠে এসেছে ভারতীয়রা ?
[নিচে আমি ৬টি কারণ
উল্লেখ করলাম যদি আপনি সহমত প্রকাশ করেন তবে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই উল্লেখ করে
যাবেন। ]
1. Diversity:
বিশ্বের বড়
প্রতিষ্ঠানগুলি CEO হওয়ার ইঁদুর দৌড়ে যে কারণে ভারতীয়দের এগিয়ে রাখে তার মধ্য একটি
বড় কারণ হচ্ছে Divercity।
সুন্দর পিচাইয়ের কথাই ধরুন, গুগলের প্রতিষ্ঠাতা Sergey Brin ও Larry Page যখন ভাবছিলেন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব কার হাতে তুলে দিবেন।
তখন তাদের হাতে অপশন ছিল কিন্তু বেশ কয়েকটি। সেখান থেকে সুন্দর পিচাইকে বেঁছে নেবার কারণ তার যোগ্যতা ও নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতার পাশাপাশি ব্যাকগ্রাউন্ড-টাকেও গুরুত্ব দিয়েছেন তারা।
সুন্দর পিচাই এসেছেন বিশ্বের সবথেকে ঘন বসতিপূর্ণ এলাকাগুলির একটি থেকে। শুধু ভারতেই ২৮টি প্রদেশ ও একাধিক ইউনিয়ন টেরিটরি আছে।
প্রতিটির সাস্কৃতি ও স্বরূপ
একটির থেকে একটি আলাদা। নানান ধরণের নানান ভাষাভাষীর মানুষের সঙ্গে মেলামেশার
মাধ্যমে বড় হয়েছেন। তার জীবনের লম্বা সফরে নানা ধরণের মানুষের সঙ্গে কাজ করতে
হয়েছে।
সুন্দর পিচাই যে জার্নিটা
করেছেন CEO হবার আগে সেটা হয়তো একজন আমেরিকান বা ইউরোপে জন্ম নেওয়া কারো জন্য
কল্পনা করাই কষ্টকর।
গুগল-ত শুধু নাম মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি নয়, বিশ্বের ৪০টির বেশি দেশে তাদের অফিস আছে। প্রায় ১৬০-এর বেশি দেশের নাগরিকরা এই প্রতিষ্ঠানে চাকরী করে।
তাঁদের পালস বুঝতে হলে, কর্মক্ষেত্রে তাদের সুবিধা অসুবিধাকে গুরুত্ত দিতে হলে ভারস্টাইলিটি খুবই গুরুত্তপূর্ণ যেটা ভারত থেকে উঠে আসা সুন্দর পিচাইয়ের মধ্য ছিল।
এই ভারস্টাইলিটির
কারণেই IIT -খড়গপুরের এই ছাত্রকে বেঁছে নিতে কোনো সমস্যাই হয়নি
গুগলের ফাউন্ডার চিয়ারম্যানকে। শুধু গুগল-ই নয় গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান আলফাবেটের
দায়িত্বও বুঝিয়ে দিয়েছেন।
2. Adaptability:
আরেকটা বিষয় ভারতীয়দের
এগিয়ে রাখে সেটা হলো মানিয়ে নেওয়ার দক্ষতা। Satya Nadela (CEO-
Microsoft)-কে উদহারণ হিসেবে ধরুন।
শিক্ষা কিংবা অর্থনীতিতে পিছিয়ে থাকা ভারতের অন্যতম একটি প্রদেশ তেলেঙ্গানা। Satya Nadela-র জন্ম সেখানেই।
Engineer হবার বাসনায় তীব্র প্রতিদ্বন্দিতামুলুক IIT-র ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু কৃতকার্য হতে পারেন নাই।
তবে কর্ণাটকের মানিপাল ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে চলে গেলেন আমেরিকায় সেখানে University of Wisconsin থেকে কম্পিউটার সাইন্স থেকে MS করলেন।
তারপর সান মাইক্রোসিস্টে ২ বছর
চাকরি করে যোগ দিলেন বিল গেটসের মাইক্রোসফটে। এর ফাঁকে MBA -টাও করে
নিয়েছেন university of chicago থেকে।
Satya Nadela,
Microsoft-র CEO হিসেবে যোগ দেয় ২০১৪ সালে। গুগলের সুন্দর পিচাইয়ের আগেই Satya
Nadela ছিল ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত নাগরিক যিনি আমেরিকার IT সেক্টরে সবচেয়ে বড় পদে
ছিলেন।
Nadela এক সময় মেট্রো এবং পাবলিক বাসের যানজট ঠেলে ক্লাস করেছেন। ছারপোঁকায় ভরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে থেকেছেন।
সেখান থেকে একদম ভিন্ন পরিবেশ ভিন্ন সাস্কৃতির দেশ আমেরিকায় উড়ে এসেছেন।
এখানেও মানিয়ে নিয়েছেন পাশাপাশি নিজের কাজের ফোকাসটাও ধরে রেখেছেন।
ভারতের এই এডাপটিবিলিটির দক্ষতাকে আমেরিকানরা খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখে।ভারতের মতো এমন জায়গা থেকে এসে আমেরিকায় এডজাস্ট করে নিয়েছে, কাজ করছে, সাফল্য পাচ্ছে।
তারমানে দুনিয়ার যেকোনো
পরিবেশে, যেকোনো পরিস্থিতিতে তাকে দিয়ে কাজ করানো সম্ভব। কাজেই নেতা
হিসেবে তার চেয়ে ভালো অপশন র কেও হতেই পারে না।
3. Obedience:
নিজেদের প্রতিষ্ঠানের
প্রতি ভারতীয়রা ভীষণভাবে অনুগত। Silicon Valley-তে এই ধারণাটাও
প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে ভারতীয়রা। মার্কিন সফটওয়্যার কোম্পানি ADOBE সর্বোচ্চ
কর্মকর্তা Santanu Narayen (CEO- ADOBE) তার বড় উদাহরণ।
হায়দ্রাবাদের ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে MBA করেছেন।
১৯৯৮ সালে Santanu যখন CEO-র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে Adobe তে যোগ দিলেন। তখন সিলিকোন ভ্যালিতে Google, Microsoft, এবং Apple -র জয়জয়কার শুরু হযেছে।
একাধিকবার লোভনীয় বেতনের অফার Santanu পেয়েছেন, Adobe তাকে যে বেতন দিতে তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি বেতনের অফার তিনি রিজেক্ট করেছেন।
Adobe-ও তার এই অনুগ্যতটাকে পুরুস্কার করেছে,
২০০৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত Adobe-র CEO হিসেবে দায়িত্ত পালন করে যাচ্ছেন।
4. Communication Skill:
আরেকটি ব্যাপার সেটি ভারতীদের এগিয়ে রাখে সেটি হলো Communication Skill। পৃথিবীতে ভারতীয়দের মতো চমৎকার Communication Skill-র দেখা খুব কম পাওয়া যাবে।
জার্মান বা ফ্রান্স নাগরিকেরা ইংরেজিতে খুব একটা বেশি পারদর্শী নন, জাপানি বা চীনের নাগরিকেরা-ত নিজেদের মাতৃভাষার বাইরে কথা বলতেই ইতস্ত করেন।
এদিকে দেশের বাইরে পড়াশোনার বা চাকরীর জন্য আসা শিক্ষিত ভারতীয়রা ইংরেজী বলেন native language-র মতো করেই।
ভারতীয়দের শিক্ষা কারিকুলামেই ইংরেজি ভাষার উপর বাড়তি যোগদান দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিন ভারতীর-ত ইংরেজীটাকে মাতৃভাষার মতোই বলেন।
চীন জাপান বা অন্য অন্য দেশে মেধার কমতি নেই, পরিশ্রমও সব অঞ্চলের মানুষ কমবেশি করেন। কিন্তু Communication Skill-এ পিছিয়ে পড়েন তারা। অন্যদিকে CEO হিসেবে বেঁছে নেবার অনেকগুলি Parameter এর মধ্য Communication Skill-এর Parameter-এ বরাবরই ছক্কা হাকায় ভারতীয়রা।
ভারতীয়রা তাদের আইডিয়া, তাদের প্ল্যান যতটা ফ্লুয়েন্টলি শেয়ার করতে পারেন অন্য দেশের নাগরিকরা সেটা পারেন না।
নতুন একটা দেশে গিয়ে সেখানে তাদের ভাষায় গরগর করে কথা বলতে পারাটা
কনফিডেস লেভেল অনেকটা উঁচু করে দেয় কোনো সন্দেহ নেই। এই কারণে সিলিকোন ভ্যালিতে
ভারতীদের বলা হয় Most Confident Emoloyee.
5. Impact of IIT:
IIT (Indian Institutes of Technology) ভারতের এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে বিশ্বজুড়ে নানা প্রতিষ্ঠানের CEO হিসেবে কর্মরত ভারতীদের একটি বড় অংশ স্নাতক করেছেন এই IIT থেকে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকগুলি শাখা রয়েছে
যেমন খড়্গপুর, কানপুর, বোম্বে, দিল্লী। পৃথিবীর সেরা এঞ্জিনীররা বের
হয় IIT থেকে তারপর ছড়িয়ে পরে সমগ্র বিশ্বজুড়ে।
ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে যদি আপনার ধারণা থাকে, তবে আপনি অবশ্যই জেনে থাকবেন IIT-তে পড়ার সুযোগ পাওয়া কতটা কষ্টকর ও ভাগ্যের বিষয়।
কেন এখান থেকে সুন্দর পিচাই বা অরবিন্দ কৃষ্ণণরা বেরিয়ে আসে সেটা বোঝার জন্য IIT-র এডমিশন সিস্টেম ব্যাবস্থার দিকে তাকালেই চলবে।
সমস্ত প্রশ্ন পত্র হয় এনালাইটিক্যাল এখানে মুখুস্ত বিদ্যার কোনো সুযোগ নেই। IIT একটি ছাঁকনির নাম, যেই ছাঁকনিতে টিকে থাকে সত্যিকারের মেধাবীরা। শুধু যে টেকনোলজির উপরেই IIT -র প্রভাব তা নয়।
আপনি দিল্লির
মুখ্য মন্ত্রী Arvind Keiriwal দিকে তাকান ও মর্ডান ভারতের সবচেয়ে
জনপ্রিয় লেখক Chetan Vhagat কিংবা জনপ্রিয় Youtuber Arunabh
Kumar কে দেখুন, এই মানুষগুলো সবাই IIT -র প্রোডাক্ট।
কর্মক্ষেত্র যাই হোক না
কেন "সেরা হতে হবে, শ্রেষ্ট হতে হবে।" IIT তার
ছাত্রদের ভিতর এই মন্ত্র ঢুকিয়ে দেয় নীরবে।
6. Big Bazar of India:
ধরুন একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে একই যোগ্যতার দুই জন মানুষ কাজ করে। মোটামোটি সব প্যারামিটারেই তাদের দক্ষতা সমান। তাদের একজন ভারতীয় অন্যজন বাংলাদেশী।
সেক্ষেত্রে CEO বেছে নেওয়ার মনোয়ন শতকরা ৯৫% ভাগ ভারতীয় নাগরিকটি অগ্রধিকার পাবে। এর একটি বড় কারণ হচ্ছে ভারতের বিশাল মার্কেট।
যেকোনো কোম্পানির জন্য ভারতের ১.৪ বিলিয়ন মার্কেট গ্রিপ করা একটি স্বপ্নের মতোই। একজন ভারতীয় নাগরিক তাদের প্রতিষ্ঠানের CEO হলে, এই বাজার দখলের ক্ষেত্রে তারা যে সুবিধাটা পাবে অন্য দেশের নাগরিকের কাছে সেটা তিনি পাবেন না।
এই ঘটনাটি ঘটেছে Nestle -এর ক্ষেত্রে। Nestle -র সর্বোচ্চ
কর্মকর্তার দৌড়ে ছিলেন একজন শ্রীলঙ্কান ও একজন ভারতীয়। এই ক্ষেত্রে তারা ভারতীয়
নাগরিক Sanjay Bahadur -কে বেছে নিয়েছেন।
ভারতীয়রা যে অগ্রযাত্রা শুরু করেছেন এটাকে শুরু হিসেবে ধরে নিলেই পারেন।
সুন্দর পিচাই কিংবা সত্য নাদেলাদের সামনে কোনো আইডিয়াল ছিল না কোনো অনুসরণীয় মডেল ছিল না যাদের মতো তারা হতে চাইতেন।
পড়েছেন, কাজ করেছেন, এবং নিজের সেরাটা উজাড় করে দিয়েছেন কর্মক্ষেত্রে।
আজ যে ছাত্র বা ছাত্রী IIT থেকে স্নাতক করে বের হচ্ছে, তারা জানে তাদের সামনে
রোলমডেল হিসেবে নাদেলা বা সুন্দর পিচাই আছে, সে চাইবে তাদের মতো হতে।
If you like my content, feel free to share it on your favorite social network.
Author,
#muktarhossain
#30minuteeducation
#twolearning #টুলার্নিং #two #learning #2learning #voiceofmuktar
0 Comments
Please do not enter any spam link in the comment box.